নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন দিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় **সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সেন্টমার্টিনের পরিস্থিতি
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানিয়েছেন, সাগরের জোয়ারের আঘাতে সেন্টমার্টিনে বেশকিছু ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা পুনরায় শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, সাগরের জোয়ার বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি অংশও ভেঙে গেছে, যা মেরামতের কাজ চলছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশের বিভিন্ন অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানান, জোয়ারে কয়েকটি গ্রামে কয়েকশ ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে এবং দশটির বেশি ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। মানুষ চরম কষ্টে আছে। তিনদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
দ্বীপবাসী বলছেন, বৃষ্টিপাত কম হলেও সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের আঘাতে দ্বীপের মাঝেরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, গোলাপাড়া ও পূর্বপাড়ার চারপাশ ভেঙে গেছে। এখানকার দুই শতাধিক বাসিন্দার ঘরবাড়ি এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে ঘরে পানি প্রবেশ করেছে এবং ঘরের চারপাশে ভেঙে গেছে। দ্বীপের অনেক স্থানে বালিয়াড়ি ধসে পড়েছে এবং সীমানা নির্ধারণে দেওয়া প্রাচীর বিলীন হয়ে গেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান **ফয়েজুল ইসলাম** জানিয়েছেন, নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২০০ ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। দশটির বেশি ঘরসহ বেশ কিছু গাছ ভেঙে গেছে। তবে বিকেল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, জোয়ারের আঘাতে দ্বীপ যেভাবে ভাঙছে, বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা না গেলে দ্বীপ সাগরে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়া নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
মেরিন ড্রাইভেরও ব্যাপক ক্ষতি
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও উত্তাল পরিস্থিতির কারণে টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের অন্তত দশটির বেশি স্থানে ভাঙনের খবর মিলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেরিন ড্রাইভে ভাঙনের পেছনে একটি বড় কারণ হলো জায়গা ভরাটে সমুদ্র থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা। তারা জানান, ট্যুরিজম পার্ক গড়ে ওঠায় জমির দাম বাড়ায় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু তুলে জমি ভরাট করছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি জমিও ভরাট করা হচ্ছে, যা সড়কের ভিত্তি দুর্বল করে ফেলছে।
সাবরাং ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য **মোহাম্মদ সেলিম** জানান, এলাকাবাসীর কাছ থেকে ভাঙনের খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের আঘাতেই এই ভাঙন ঘটছে।