বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসন বহাল রেখেই জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে ধাপে ধাপে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ২২তম দিনে এই সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করে কমিশন।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো দল যদি ১০০টি আসনে প্রার্থী দেয়, তাদের মধ্যে অন্তত ৭ জন নারী হতে হবে। এভাবে ৩০০ আসনের ক্ষেত্রে ২১ জন নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে।
কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। এর জন্য সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে এই রূপান্তর সম্ভব করা হবে।
১৪তম জাতীয় নির্বাচনে ৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের পর, পরবর্তী নির্বাচনে তা ১৫ শতাংশ এবং ধাপে ধাপে প্রতি নির্বাচনে ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে একসময় ১০০ জন নারীকে সরাসরি নির্বাচিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশন সরাসরি ভোটে ১০০ নারী আসন এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ নারী আসনের প্রস্তাব দেয়। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে দ্বিমত জানায়। এরা বিদ্যমান সংরক্ষিত আসন পদ্ধতির পক্ষে মত দেয় এবং অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নারীদের সংখ্যা নির্ধারণের দাবি তোলে।
অন্যদিকে, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি সরাসরি ভোটে নারী আসনের পক্ষে অবস্থান নেয়। এনসিপিও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী নির্বাচনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে।
কমিশনের গত ১৪ জুলাইয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যে দল ২৫টির বেশি আসনে মনোনয়ন দেবে, তাদের ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী মনোনয়ন দিতে হবে। তবে অধিকাংশ দল এই প্রস্তাবকে অবাস্তব ও বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে জানায়।
পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি বাস্তবধর্মী সমন্বয় প্রস্তাব দেন, যেখানে প্রথমবারের মতো ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের কথা বলা হয় এবং তা ভবিষ্যতে ১০ শতাংশে উন্নীত করার কথা উল্লেখ করা হয়। আজকের বৈঠকে কমিশনের সংশোধিত প্রস্তাবে সেই রূপরেখা বিবেচনায় আনা হয় এবং ৭ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নকে বাস্তবায়নযোগ্য একটি লক্ষ্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়।
বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনের মেয়াদ ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২৫ বছর বাড়িয়ে ২০৪৩ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই কমিশনের নতুন প্রস্তাবে এই আসনগুলো বহাল রেখেই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়।