সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া শাহবাগ থানার মামলায় নতুন করে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(বি) ও ৪২০ ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক খালেক মিয়া এই সংযোজনের আবেদন করলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান তা মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, “আসামি এ বি এম খায়রুল হক বিচারক হিসেবে লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলক, বিদ্বেষাত্মক এবং বেআইনিভাবে রায় প্রদান করেছেন। তিনি জাল কাগজপত্র সৃজন করে বিচারিক জালিয়াতি করেছেন। মামলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিচার করে ১২০-বি/৪২০ ধারা সংযোজন প্রয়োজন হয়।”
এর আগে ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট রাতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করেন। সে সময় দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারা উল্লেখ ছিল। সম্প্রতি তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ২৪ জুলাই সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিনই যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আহাদ হত্যা মামলায় তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে ফতুল্লা থানার একটি মামলায় ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের আদেশের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার পর, ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর খায়রুল হক বেআইনিভাবে এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, তিনি ‘জালিয়াতি করে রায় পরিবর্তন করেছেন’ এবং তা করেছেন ‘রাজনৈতিক স্বার্থে ও পরবর্তী পদ লাভের আশায়’।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতির রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী, যা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিল, সেটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। যদিও সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বজায় রাখার পথ রেখেছিল, তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা বাদ দেওয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়।
আইনি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামলাটির সঙ্গে শুধুমাত্র সংবিধান ব্যাখ্যার প্রশ্ন নয়, বরং প্রভাব খাটানো, পক্ষপাতদুষ্টতা এবং নৈতিকতার প্রশ্নও জড়িত।