ভারত ও রাশিয়ার অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে চরম রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে ভারতজুড়ে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ট্রাম্পের বক্তব্যকে সমর্থন করে মোদী সরকারকে নিশানা করলেও, পাল্টা সুরে জবাব দিয়েছে কেন্দ্র। ট্রাম্পের মন্তব্য ঘিরে কূটনৈতিকভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া ও ইরান।
‘মৃত অর্থনীতি’ নিয়ে বিতর্ক শুরু ট্রুথ সোশ্যাল থেকে, গত ৩০ জুলাই নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ট্রাম্প লেখেন, “ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, তা আমার কিছু যায় আসে না। তারা তাদের ‘মৃত অর্থনীতি’ একসঙ্গে ধ্বংস করতে পারে।” তিনি আরও দাবি করেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য অত্যন্ত সীমিত, কারণ নয়াদিল্লির শুল্ক বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
রাহুলের সমর্থন, কেন্দ্রের জবাব, ট্রাম্পের মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে সংসদ ভবনের সামনে রাহুল গান্ধী বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যি কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী ছাড়া এটা সবাই জানে।” পাল্টা জবাবে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, “ভারতীয় অর্থনীতি ‘মৃত’ নয়, বরং দ্রুত গতিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন: রাশিয়া-ইরান ভারতের পাশে, রুশ রাষ্ট্রদূত নয়াদিল্লিতে ভারতীয় আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্পষ্ট করেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ়। ‘মৃত অর্থনীতি’ বলাটা অযৌক্তিক।” রুশ নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে বলেন, “মনে রাখবেন ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর ভয়ঙ্কর ‘মৃত হাত’ ছিল, যার অস্তিত্বই ছিল না। ইরানের দিল্লি দূতাবাস এক্স-এ পোস্ট করে জানায়, “যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। ভারত ও ইরানের মতো স্বাধীন দেশের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞা, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
মৃত’ নয়, বরং গতিশীল ভারতের অর্থনীতি—তথ্য বলছে যা বিশ্ব অর্থনীতির সূচকে ভারতের অবস্থান একেবারে বিপরীত। জিডিপি নমিনাল সূচকে ভারত এখন বিশ্বে ৫ নম্বরে, জিডিপি পিপিপি সূচকে অবস্থান তৃতীয়, আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬.৪% হারে বৃদ্ধি পাবে ভারতের অর্থনীতি—চিন ও আমেরিকাকে পেছনে ফেলে। ২০২০ সালের কোভিড পরিস্থিতিতেও ভারত ছিল বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতির তালিকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতির গতি পরিমাপ হয় উৎপাদন, রপ্তানি, আমদানি, বিনিয়োগ ও চাহিদা বিশ্লেষণের মাধ্যমে—যার প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত আজ মজবুত।
মেড ইন ইন্ডিয়া’ স্মার্টফোনে মার্কিন বাজারে দখলদারি, ট্রাম্পের বক্তব্যের মাঝেই সামনে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০২৫ সালের প্রথম ৫ মাসে আমেরিকায় আমদানি হওয়া প্রতি তিনটি স্মার্টফোনের একটি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া, ২০২৪ সালের ১১% থেকে বেড়ে এ বছরে ৩০% স্মার্টফোন এসেছে ভারত থেকে, ২.১৩ কোটি ফোন আমদানি, যার বাজারমূল্য ৯৩৫ কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞদের মত, “এই গতিতে চলতে থাকলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে আমেরিকান স্মার্টফোন বাজারে দাপট দেখাবে ভারত।
বাধা? নাকি সুযোগ! ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে মতবিভাজন, ট্রাম্পের ঘোষণায় ভারতীয় পণ্যে ২৫% শুল্ক এবং ইরান থেকে তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা—এর ফলে কিছু ঝুঁকি থাকলেও বড় ধাক্কার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ অদিতি রামনের মতে, “ওষুধ, রত্ন ও পোশাক শিল্পে সাময়িক ধাক্কা এলেও, ভারতের দেশীয় চাহিদা এতটাই শক্তিশালী যে সামগ্রিক অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। বরং নতুন জোট ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”