বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের অবস্থা এখন শোচনীয় পর্যায়ে— এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে বিদ্যুৎ খাতে কিছুটা স্বস্তি এলেও গ্যাস সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে, শিল্পকারখানায় গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে।
ড. ইজাজের মতে, সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আটকে থেকে তাৎক্ষণিক সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। “গ্যাসের নতুন উৎস যুক্ত না হলে প্রতিবছর পরিস্থিতি খারাপ হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ায় বিদ্যুতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে, কিন্তু জ্বালানি খাতের সংকট ভয়াবহ।”
চুক্তি পর্যালোচনায় অগ্রগতি নেই
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় বিদ্যুৎ ক্রয়ে স্বার্থবিরোধী ও দুর্নীতিপূর্ণ চুক্তি হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার পর্যালোচনার জন্য কমিটি করলেও প্রতিবেদন প্রকাশ বা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। “যারা ক্ষতিকর চুক্তি করেছে, তাদের অতি মুনাফার অংশ ফিরিয়ে এনে সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে বাধ্য করা উচিত।”
দায়মুক্তি আইন বাতিলে মিশ্র প্রভাব
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন বাতিলকে তিনি ইতিবাচক মনে করলেও বলেন, এর ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ৩১টি প্রকল্প এবং দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বাতিল হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এখন ২০২৭ সালের আগেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নেই।”
বিনিয়োগে অনীহার জন্য সরকারের ব্যর্থতা
অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধা থাকলেও তিনি মনে করেন, সরকার তাদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। “যথাযথ বার্তা দিতে পারলে অন্তর্বর্তী সময়েও বিনিয়োগ আগাতে পারত।
দাম না বাড়ানোর সমালোচনা
বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্তকেও তিনি টেকসই মনে করেন না। “আজ না কাল দাম বাড়াতে হবে। এখন না বাড়ালে পরে একবারে বেশি বাড়াতে হবে, যা ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।”
‘শুধু রুটিন ওয়ার্ক’
ড. ইজাজ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে এক বছরে কোনো অগ্রগতি হয়নি। “একটা ১০০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প ছয় মাসে করা যায়, কিন্তু এক বছরেও উৎপাদন বাড়েনি। সরকার শুধু দায় এড়িয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।”