সামিউল হাসান টলমল: বর্তমানে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। ইতিমধ্যে উচ্চ সুদের হার, ডলারের উচ্চমূল্য, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কমে গেছে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি। একই সঙ্গে কমে গেছে পণ্যের চাহিদাও। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে কমবেশি সবার মধ্যেই নিরাপত্তা ও আস্থাহীনতা বিরাজ করায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগে বিনিয়োগ কিংবা ব্যবসা প্রসারের দিকে মনোযোগ নেই। বরং একের পর এক কারখানা বন্ধের কারণে লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ। সার্বিক অর্থনীতিতেই মন্দার ছায়া নেমে এসেছে। বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে এবং ব্যাংকে ঋণখেলাপিও রেকর্ড গড়েছে। আর কর-জিডিপি অনুপাত কমতে কমতে ৬.৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে। তাছাড়া বেকারত্ব বেড়ে ৩.৭ শতাংশ হয়েছে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা থাকলেও টানা কমছে দুই মাস ধরে। আগস্টে ৩ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে আর সেপ্টেম্বরে ৪.৬১ শতাংশ হারে কমেছে। সার্বিকভাবে বেশ চাপেই রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাও ক্রমাগত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও সংশয় প্রকাশ করে যাচ্ছে। এমনকি খোদ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পেও গতি নেই। বলা যায় ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো রকমে টিকে থাকার মতো অবস্থায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুল মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। মূলত উচ্চ সুদের হার ও উপকরণের বাড়তি খরচের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকারের নির্বিকার। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নানা অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীর শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ তা চালু রেখেই আইনি প্রক্রিয়া চালানো যেতো। তাছাড়া কারো কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে রাখার কারণে তাদের কারখানাগুলো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে ওসব কারখানা রুগ্ন হয়ে বন্ধের পথে। অনেক ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকে মামলা-হামলার শিকার হয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। তারা বিদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ বৈঠকে অংশ নিতে পারছেন না।
সূত্র আরো জানায়, দেশের অর্থনীতির সব সূচকই এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসা-বিনিয়োগবান্ধব নয়। রপ্তানি খাতেও ভাটার টান লেগেছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে টানা কমেছে রফতানি প্রবৃদ্ধি। কারণ সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগেই স্থবির বিরাজ করছে। আস্থাহীনতা চরমে। বর্তমানে প্রায় গতিহীন সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। অথচ জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে আসে। সেখানে বেসরকারি খাতও জড়িত। সরকার শুধু বরাদ্দ দেয়। বাস্তবায়ন করে বেসরকারি খাত। সেক্ষেত্রে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া, তাদের খাদ্য সরবরাহ করা সবই একটা সাপ্লাই চেইনের ব্যাপার। কিন্তু গত এক বছর ধরে থেমে রয়েছে পুরো কাজ। ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাছাড়া নারী উদ্যোক্তারাও সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক সরকার না হওয়ায় কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যা খুশি তা করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও রাজনৈতিক সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তবে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার এলে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। বর্তমানে এক বছরে বেকারত্ব অনেক বেড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অ্যাকসেসরিজ খাতের সংগঠন বিজিএপিএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, অ্যাকসেসরিজ খাতের ৪৩ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। উচ্চ সুদের হারই এর বড় কারণ। আগে ঋণের সুদ ছিল ৯ শতাংশ। এখন ১৬ শতাংশ দিতে হচ্ছে। তাছাড়া বেশি দাম দিয়েও ঠিকমতো জ্বালানি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি ক্রয়াদেশও আগের মতো নেই। পণ্যের দরও কমে গেছে। সব মিলিয়ে সবাই সংকটে রয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক কারণ তো রয়েছেই।