সাইফুল ইসলাম পলক, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার মুরাদনগরে সেবাগ্রহীতাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের সামনেই প্রকাশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ উড়িয়ে দেওয়ার হুমকির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি (গত ১২আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে) উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াারম্যানের কক্ষে উপস্থিত চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজনের সামনেই এই হুমকি দেন এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে পরিষদে আগত সেবাগ্রহীতা ও সচেতন মহলের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবত জাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে সেবা প্রত্যাশীদের সাথে দুর্ব্যবহার, নাগরিক সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও দালাল সিন্ডিকেট পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। জন্ম-নিবন্ধন, মৃত্যু-সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও ট্রেড-লাইসেন্সের সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেন তিনি। টাকা না দিলে সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি, টালবাহানা ও সার্ভারের জটিলতার অজুহাতে দিনের পর দিন তার পেছনে ঘুরতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও জাহাপুর ইউনিয়ন ব্যাতিত অন্য এলাকার জন্ম-নিবন্ধন করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতারা সহজে ও হয়রানি ছাড়াই নাগরিক সেবা পেয়ে থাকেন। তবে এর বিনিময়ে দিতে হয় ঘুষ। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজ থেকেও মোটা অংকের কমিশন নেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, এ প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রায়ই সেবা প্রত্যাশীদের সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন এবং কেউ সরকারি ফি’র বাইরে টাকা না দিলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করেন। গত ১২ আগস্ট মঙ্গলবার কয়েকজন সেবাগ্রহীতা চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলে ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন তাৎক্ষনিক ক্ষিপ্ত হয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনেই প্রকাশ্যে ইউনিয়ন পরিষদ উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জাহাপুর ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, এ পরিষদের গ্রাম পুলিশদের নানা কর্মকান্ডে আমি বিব্রত। ওইদিন এক সেবাপ্রত্যাশী এক গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ করায় আমি কিছুটা রাগান্বিত হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদ উড়িয়ে দেওয়ার মত কোন কিছু বলি নাই। আমি বলেছি ইউনিয়ন পরিষদে হ-য-ব-র-ল লাগিয়ে দেব। এখানে শব্দচয়নে কিছুটা ভুল হতে পারে। এ কথা বলার উদ্দেশ্য হলো সকল গ্রাম পুলিশ যেন সচেতন হয়ে যায়। পরিষদে কর্মরত গ্রাম পুলিশরা খুবই বেপরোয়া। এসব গ্রাম পুলিশরা সচিব এবং চেয়ারম্যানের নাম করে সেবাপ্রত্যাশীদের সাথে বিভিন্ন কাজের চুক্তি করে থাকে। আমি এ বিষয়ে অতিষ্ট হয়ে এক গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। পরে চেয়ারম্যান আমাকে বলেছে এবারের জন্য সাধারণ ক্ষমা করে দিতে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিষয়ে পরিষদের চেয়ারম্যান বিস্তারিত বলতে পারবেন। জাহাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ সওকত আহমেদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে আগত সকল লোকজনের সেবক আমরা। তাদের সাথে দূর্ব্যবহার কোনভাবেই কাম্য নয়। লোকজনের সামনে প্রশাসানিক কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে যে কথাগুলো বলেছেন তা অত্যান্ত দুঃখজনক। পরিষদে আগত সেবাপ্রত্যাশীদের কোনপ্রকার হয়রানি ছাড়াই নাগরিক সেবা দিতে দায়িত্ব গ্রহনের প্রথম থেকেই আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমি প্রতিটা কাগজে স্বাক্ষর করার আগে সেবাপ্রত্যাশীদের জিজ্ঞেস করি কেউ অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে কি-না। অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ারি বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তারপর স্বাক্ষর করি। পরিষদের কেউ সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সরকারি ফি’র অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কেউ আমার কাছে এখনো কোন অভিযোগ করেনি। চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ কিছু জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।