নূরুল ইসলাম পাপ্পু: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী এখনো নিশ্চিত হয়নি। তাই বর্তমানে তিন নেতা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ দাপিয়ে বেড়ালেও শেষমেশ কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন তা এখনও নিশ্চিত নয়। অপরদিকে জামায়াত, এনসিপি, এলডিপি, বাংলাদেশ আমজনগন পার্টি, ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এলাকায় প্রচার- প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ধানের শীষ প্রতীকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এনিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।
এলাকায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক সাহাবুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার। কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে। প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়ায় এলাকার মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা এন. এম. আব্দুল্লাহ উজ্জ্বল অবিলম্বে এই আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার জন্য দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তিনি প্রথমে ঢাকা-১২ আসনে প্রার্থীতার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে এই আসনে গুম হওয়া ব্যারিস্টার আরমানের সম্ভাব্য মনোনয়নের কারণে সানজিদা ইসলাম তুলি স্থানান্তরিত হয়েছেন। এরফলে ঢাকা-১৪ আসন থেকে বাদ পড়েছেন বিএনপি নেতা এস.এ.সিদ্দিক সাজু।
অন্যান্য দলের প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জামায়াতে ইসলামের সাইফুল আলম খান মিলন, এনসিপির মুনতাসির মাহমুদ, এলডিপির আমান সোবহান, বাংলাদেশ আমজনগন পার্টির সায়েদুল ইসলাম বাদল, ঐক্যজোটের জুনায়েদ সাকি।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সনে এই আসনের প্রথম এমপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সনের উপ-নির্বাচনে মোহাম্মদ হানিফ এই আসনের এমপি হন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এই আসনটি গঠিত। এই আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেন তিনি মন্ত্রীত্ব পান এবং সেই দল জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।
ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির তিন জন প্রার্থী মাঠে কাজ করছেন। অপরদিকে সব দলেই একজন করে প্রার্থী কাজ করছেন। এতে দলের ভরাডুবির আশংকা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাবেক ভিপি ও নোয়াখালীর একটি আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ হানিফ বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। বড় সংগঠন হিসেবে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকবেই। এখানে যারা প্রার্থী তারা সকলেই যোগ্য ও ত্যাগী। সবশেষে দলীয় হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দিবে দলের সকলেই একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্যে কাজ করবে।
হাতিরঝিল থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকরাম হোসেন টুটুল বলেন, তিনজন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ায় দলীয় কোন্দল নয়, বরং দল উপকৃত হচ্ছে, চাঙ্গা হচ্ছে। এতে দল যাকে মনোনীত করবে তার জন্যে কাজ করতে সহজ হবে। সবাই তখন একযোগে ব্যক্তি নয়, ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কাজ করবে।
হাতিরঝিল থানা বিএনপির সদস্য মাহমুদুর রহমান ওহাব বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলে গ্রুপিং প্রতিযোগিতায় সহযোগিতা করে। নেতৃত্ব তৈরিতে সহযোগিতা করে। তবে প্রতিহিংসামূলক গ্রুপিং দলকে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সংগঠনে বিভাজন সৃষ্টি করে, এটা সত্য। বিএনপির হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশই পারে এই গ্রুপিং দূর করতে।
জামায়াত প্রসঙ্গে ওহাব বলেন, জামায়াত তো নির্বাচন চায় না। তারা ধর্মীয় লেবাস লাগিয়ে প্রার্থীতার নামে জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে ওদের ভরাডুবির কথা দেশের মানুষ মনে রাখবেন আশাকরি।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে বিএনপির মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সনে বিএনপির মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের ডাঃ এইচ বি এম ইকবাল এমপি হন। ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপির মোছাদ্দেক আলী ফালু এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনিই এমপি ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাকিরা প্রায় সকলেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেদিক বিবেচনায় আসনটি সব দলের জন্যই অতিগুরুত্বপূর্ণ। তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে বর্তমানে এখানে বিএনপির অবস্থান খুবই শক্ত।

