সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ছুটি কমানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। বর্তমানে বছরে গড়ে ৭৬ দিন ছুটি দেওয়া হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে। তবে আন্দোলন, দুর্যোগ ও প্রশাসনিক কারণে অতিরিক্ত ছুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে ছুটি ১৬ থেকে ২০ দিন কমিয়ে ৫৬ থেকে ৬০ দিনে নামিয়ে আনার প্রস্তাব এসেছে। আপাতত শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বহাল থাকছে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) বেগম বদরুন নাহার ডলি। উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাউশি, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও মাউশি চূড়ান্ত মত দেয়নি। সিদ্ধান্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ছুটি কমানোর পরিকল্পনা কার্যকর হবে না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের শিক্ষাপঞ্জি প্রণয়নের সময় এই পরিবর্তন কার্যকর হতে পারে। বর্তমানে বার্ষিক ছুটির পাশাপাশি ৫২-৫৩ দিন সাপ্তাহিক ছুটিও রয়েছে। এ ছাড়া নানা অপ্রত্যাশিত কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শেখায় ঘাটতি বাড়ছে। শুধু ছুটি নয়, বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা বাড়ানোর বিষয়েও ভাবছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার মান উন্নয়নে শুধু পাঠ্যবই নয়, শেখার সময়ও বাড়ানো জরুরি।
২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গঠিত ‘প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন পরামর্শক কমিটি’ ইতোমধ্যে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধিসহ নানা সুপারিশ জমা দিয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ছুটি কমিয়ে ও সময় বাড়ানো আবশ্যক। তবে তার পাশাপাশি অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনাতেও জোর দিতে হবে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় দুই শিফটে পরিচালিত হয় এবং শেখার সময় অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। কমিটির মতে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সময় বাড়ানো উচিত।
অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠনগুলো সময়সূচি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয় খোলা রাখার দাবি জানায়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, “ছুটি কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে একটি সভা হয়েছে, আরও আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।