গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী যে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, তা আর অস্বীকারের জায়গায় নেই। তবুও পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এটিকে অস্বীকার করে চলেছে, যা ইসরায়েলি পত্রিকা ‘হারেৎজ’-এর সাংবাদিক নির হাসোনের ভাষায় “হলোকাস্ট অস্বীকার করার মতোই ঘৃণ্য।
তিনি বলেন, “গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণঘাতী অনাহার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করাটা শুধু ইতিহাস বিকৃতি নয়, বরং ভুক্তভোগীদের প্রতি সরাসরি অবমাননা।”
হারেৎজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের দায় প্রথমে হামাসের ওপর চাপিয়ে পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে। বলা হয়েছে, “যুদ্ধের সময় এমন হয়”, এমনকি এমন কথাও বলা হয়েছে যে, “গাজায় কোনো নির্দোষ মানুষ নেই।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, “সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে”, “ক্ষুধায় মরছে যেসব শিশু, তাদের মা-বাবা মোটা”, কিংবা “হামাস গুহায় বসে কলা খাচ্ছে”— যদিও সেই ভিডিওটি ছয় মাস পুরোনো এবং প্রচার করছে আইডিএফের মুখপাত্র, যিনি একাধিক মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য সমালোচিত।
নির হাসোন বলেন, “এই অস্বীকার কেবল সত্য গোপনের চেষ্টা নয়, বরং এক ধরনের মনুষ্যত্বহীন বিদ্রুপ। ক্ষুধার্ত শিশুর মায়ের কান্নাকে বলা হচ্ছে ‘নাটক’, মৃত্যুর আগে এক কিশোরের হাড়গোড়া বের হওয়া শরীরকে বলা হচ্ছে ‘অপপ্রচার’। এটি গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ারই অপচেষ্টা।
চ্যাম্পিয়ন’ কিশোর আতেফের মৃত্যু অনাহারে
গাজা শহরে খাবারের সংকটে পড়ে মারা গেছে ১৭ বছরের এক ফিলিস্তিনি কিশোর আতেফ আবু খাতের। একসময় স্থানীয় ক্রীড়ায় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এই কিশোর খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
আল-শিফা হাসপাতালের একটি সূত্র আলজাজিরাকে জানায়, আতেফের আগে কোনো রোগ ছিল না। কিন্তু গত কয়েক মাসে তার ওজন কমে ৭০ কেজি থেকে মাত্র ২৫ কেজিতে দাঁড়ায়। তার শরীরে অপুষ্টির চিহ্ন এতটাই প্রকট ছিল যে মুখের হাড়গোড়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল।
আলজাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “আতেফ ছিল গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা হাজারো কিশোরের একজন। খাবারের জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হচ্ছিল তাকে।”
আতেফের পরিবারের ভাষ্যমতে, মৃত্যুর আগে সে দুর্বল হয়ে হাঁটতেও পারত না। ভাতের দানা কিংবা দুধের এক চামচও মিলছিল না তার জন্য। তার মরদেহের ছবি আলজাজিরা যাচাই করে প্রকাশ করেছে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে অনাহারে কঙ্কালসার হয়ে যাওয়া একটি শরীর।
ত্রাণ নিতে এসে গুলিবিদ্ধ: ১,৩০০ জনের মৃত্যু
গাজায় জাতিসংঘ অনুমোদিত জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার নিতে আসা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে নিয়মিত গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ জানায়, শুধুমাত্র গত মে মাসে তাদের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১,৩০০ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।
বিশ্বের চোখের সামনে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট চলতে থাকলেও কিছু রাষ্ট্র ও সংগঠন এই সংকটকে অস্বীকার কিংবা জাস্টিফাই করতে ব্যস্ত। কিন্তু বাস্তবতা হলো—গাজার শিশুরা অনাহারে মরছে, কিশোররা হাড়ে পরিণত হচ্ছে, মা-বাবারা চোখের সামনে সন্তানকে মরতে দেখছেন।