গোটা জাতি যখন কোনো দুর্বিপাকে পড়ে দুর্যোগে, দুঃসময়ে বা দাঙ্গা-বিক্ষোভে প্রথমেই যাদের দেখা মেলে, তারা হলেন বাংলাদেশ পুলিশ। অথচ সমাজের নানা পর্যায় থেকে যাদের উদ্দেশে অবিশ্বাস, সমালোচনা কিংবা কখনো কখনো ঘৃণাও ছুঁড়ে দেওয়া হয়, দিনশেষে সেই বাংলাদেশ পুলিশই জনসাধারণের পাশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে।
একটা সংঘাত, একটা মিছিল, একটা বিস্ফোরণ, কিংবা একটা অগ্নিকাণ্ড যাই হোক না কেন, সবার আগে ছুটে আসে পুলিশের নীল গাড়ি, রাস্তায় নামেন নীল ইউনিফর্ম পরা সদস্যরা। জনতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, শৃঙ্খলা রক্ষা করতে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা জীবনের ঝুঁকি নেন। তবু বারবার উপেক্ষিত হন, প্রশ্নবিদ্ধ হন, এমনকি অবমাননার শিকারও হন।
সরকার আসবে, যাবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বদলাবে। কিন্তু জনগণের পাশে পুলিশের দায়িত্ব বদলায় না। আমরা আছি, থাকবো। গত কয়েক বছরে দেশের নানা সংকটে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নাতীতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির সময় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পুলিশের সক্রিয়তা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বন্যায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজ—সবখানেই ছিলো তাদের নিরলস প্রচেষ্টা।
তবে তার পরও সামাজিক মাধ্যম কিংবা জনপরিসরে পুলিশের মানসিক অবস্থা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। প্রতিদিন অপরাধের মোকাবিলা, জীবনের ঝুঁকি, দীর্ঘ সময়ের ডিউটি আর পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব—সবকিছু নিয়েও তারা নিরব থাকেন। অভিযোগ শোনা যায় তাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু তাদের মুখে থাকে না কোন জবাব দেওয়ার স্বাধীনতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস গড়ে উঠলে কেবল বাহিনী নয়, দুর্বল হয় রাষ্ট্র কাঠামোই। এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সালেহ বলেন, পুলিশকে শুধুই সমালোচনার চোখে না দেখে, প্রশংসার জায়গাটিও তুলে ধরতে হবে। তাহলে বাহিনীর মনোবল বাড়বে এবং তারা আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
জনগণও এখন ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন, সব পুলিশ খারাপ নয়—এমনকি যারা রাস্তায় মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাদের অধিকাংশই নিষ্ঠাবান। একজন মা হারানো শিশুকে তার কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য কিংবা দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় একজন কনস্টেবলের পকেটের টাকায় খাবার কিনে দেওয়ার ভিডিও—এগুলোই বাস্তব বাংলাদেশ পুলিশ। সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় পুলিশ, তবে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমগ্র বাহিনীকে ‘ভিলেন’ বানানো কতটা সুবিবেচিত? সেই প্রশ্নই এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়—তারা এই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার প্রথম ভরসা। রাজনৈতিক দল পাল্টাবে, সরকারের রঙ বদলাবে, কিন্তু এই পুলিশেরাই থাকবে—রাস্তার মোড়ে, মানুষের সুরক্ষায়, আপন দায়িত্বে অটল।
শেষ কথা: বাহিনী নয়, দায়িত্বের নাম—বাংলাদেশ পুলিশ।