সামিউল হাসান টলমল : চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ বাড়াতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা এর বিরোধিতা করছে। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এতোদিন এর অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধির বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। তাতে ১৬৮টি ক্যাটাগরিতে ট্যারিফ বৃদ্ধির পাশাপাশি রাখা হয়েছে ৪টি ক্যাটাগরিতে আগের দর। এর ফলে বিগত ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর আগে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। ওই বন্দর দিয়ে প্রতিবছর গড়ে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে এখন বন্দর ব্যবহারকারীরা এর সুফল পাবে। কারণ ট্যারিফ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে বন্দরের উন্নয়ন হবে। বন্দরে বিভিন্ন সেবা বাড়ানো হবে। এতে প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হবে বন্দর ব্যবহারকারীরা। যদিও বন্দর ব্যবহারকারীরা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ যুক্তির সাথে একমত নন।
সূত্র জানায়, বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ট্যারিফ বৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয় বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি। তাদের মতে, বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অশনিসংকেত চলছে। করোনা পরবর্তী সময়ে যখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আবারো মাথা উঁচু করতে শুরু করেছে তখনই ট্যারিফ বৃদ্ধি করে তা পেছনের দিকে টেনে ধরছে। ট্যারিফ যা ছিল তাই ঠিক ছিল। বাড়ানো যৌক্তিক নয়। কারণ মার্কিন ডলারে বন্দর ট্যারিফ নেয়া হয়। ১৯৮৬ সালে যখন বন্দর ট্যারিফ ঘোষণা করে তখন ডলার রেট ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলার রেট ১২২ টাকা। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বন্দর ব্যবহারকারীরা চার গুণ বেশি ট্যারিফ দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্যারিফ বাড়ানো কতোটুকু যৌক্তিক তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ বন্দর একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তারা ব্যবসার পরিবেশ বজায় রাখবে এাঁই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন ট্যারিফ বাড়ালে দিন শেষে তা গিয়ে পড়বে ভোক্তার ওপরে। তাতে হয়তো বন্দরের আয় বাড়বে কিন্তুবিপাকে পড়বে ভোক্তারা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য।
সূত্র আরো জানায়, একটি জাহাজ বন্দর সীমানায় প্রবেশের পর রিভার ডিউজ পেয়ে থাকে। একইভাবে বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে যাওয়ার সময়ও রিভার ডিউজ পায়। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে রয়েছে বন্দরে জাহাজ ভেড়ানোর ফি। আবার বহির্নোঙর থেকে একটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ানোর সময় পাইলটিং ফি, বন্দরের ইকুইপমেন্ট ব্যবহার ফি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং ফি, বন্দরের ইয়ার্ডে পণ্য রাখার ফিসহ অনেক ধরনের ফি রয়েছে। আর সব ফি থেকে অর্জিত অর্থ দিয়েই বন্দর স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের আয় দিয়ে বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম করে থাকে। একই সঙ্গে নতুন নতুন জেটি নির্মাণ, টার্মিনাল নির্মাণ ও ইকুইপমেন্ট কেনাসহ বন্দরের উন্নয়নে সব কাজ করে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত ট্যারিফ বৃদ্ধির বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপন করা হয়েছে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এখন তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর গেজেট আকারে প্রকাশ পেলেই ট্যারিফ কার্যকর করা যাবে। বিগত ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এটা ট্যারিফ বৃদ্ধি নয়, বরং ট্যারিফ রেট পুনঃনির্ধারিত করা হচ্ছে। এর বিভিন্ন আইটেম বিভিন্ন হারে ট্যারিফ বাড়বে। অর্থাৎ গড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বৃদ্ধি পাবে।